Breaking News

আধার রাতের আলো । পর্ব - ০৫

আলো বেগম মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। কি বললো তার ছেলে! সত্যি কি হুর কে বিয়ে করবে? হুরের রুপ দেখে তার ছেলে হয়তো পাগল হয়ে গেছে।?তার ছেলে তো কারো রুপে পাগল হওয়ার মতো না।

আবার ভাবছে হুরতো পর্দা করে তাহলে কি ভাবে দেখলো? আলো বেগম দ্রুত নিজের ফোন থেকে আদিয়াকে কল করলো,রিং হয়ে কেটে যাচ্ছে ওপাশ থেকে কেউ রিসিভ করছে না।বার কয়েক রিং হওয়ার পর আদিয়া কল রিসিভ করলো, আলো বেগম ব্যাস্ত কন্ঠে বললো,আদিয়া তুই তাড়াতাড়ি একবার হুরের বাসায় যা। তুইতো ওদের বাসা চিনিস। রাগ অভিমান পরেও করতে পারি।
- কিন্তু কেন যাবো আমি সেখানে সেটা তো বলবে নাকি?
- সেসব বলার এখন সময় নেই তুই একটু দ্রুত সেখানে পৌঁছা। মায়ের কথাটা রাখ।
আদিয়া নিজের ওরনাটা গায়ে জড়িয়ে পার্সটা নিয়ে হোস্টেল থেকে বের হয়ে গেলো। বাড়ি থেকে রাগ করে হোস্টেল উঠেছে। আদিয়ার এখান থেকে যেতে প্রায় ঘন্টা খানিক সময় লাগবে।

আরো পড়ুনঃ
মাহতাব সাহেব বলে, দেখি তোর বিয়ে বৈধ বলে কি করে হুজুর।
হুজর কিছু একটা ভাবতে শুরু করলেন।
কারণ হুজর এটাও যাইছেনা এই বুড়ো লোকটার সাথে মেয়েটার বিয়ে হোক।
হুজুর চিন্তিত দেখে। ভেতর থেকে হুর বলল,হুজুর আপনি যা ভাবছেন সেরকমটা নয়।
এই বিয়ে সম্পূর্ণ বৈধ। ইমাম আবু হানিফা এবং তার অনুসারীদের মতে
বিবাহের ক্ষেত্রে,একজন নারী নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে পারেন যেকোন পুরুষের সাথে।
সেক্ষেত্রে তার অবিভাবকদের অনুমতি শর্ত নয়।
ছেলেদের ক্ষেত্রে তো কারো মতেই অবিভাবকের অনুমতি শর্ত নয়।
কিন্তু অন্যনো ওলামায়ে কেরামের মতে তিনি তার বিবাহের ক্ষেত্রে নিজের অবিভাবকের অনুমতিতে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে।নয়তো সাধারণ ভাবে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে না।
কিন্তু যদি কোন অবিভাবক তার উপর অবিচার করে। অথবা যথাযথ পাত্র নির্বাচন করতে ব্যার্থ হয় বা অভিভাবকের যে গুন থাকা জরুরি সেসব না থাকে।
তাহলে সেক্ষেত্রে তার জন্য বিবাহের অনুমতি রয়েছে।
( কালেক্ট শায়েখ আব্দুল্লাহ, আল সুন্নাহ ফাউন্ডেশন)

হুজুর মুচকি হেসে বলেন,আমি এই কথাটা বলতে চেয়েছিলাম।
যদিও এটাতে বিভিন্ন মত পার্থক্য রয়েছে।
তবুও তোমার যে জালেম অবিভাবক সেক্ষেত্রে
শরীয়ত মোতাবেক আল্লাহ তায়ালাকে সাক্ষী রেখে তোমরা একে অপরে স্বামী স্ত্রী।আলহামদুলিল্লাহ।
আল্লাহ তোমাদের বিবাহিত জীবন সুখকর করুক।আমিন।
ফুয়াদ বেশ অবাক হলো,
এই মেয়ে চুপচাপ এতোক্ষণ সবকিছু মেনে নিচ্ছিল আর এখন কি সুন্দর বিবাহ বৈধ হওয়ার ভাষণ দিচ্ছে। তাহলে আগে কেন কিছু বললো না!
বোরখায় আবৃত হুররে হাত ধরে সবার সামনে থেকে নিয়ে চলে গেলো ফুয়াদ।
সালমা বেগমের চোখে আনন্দ অশ্রু।
হিরা এক কোনে দাঁড়িয়ে রইলো তার হয়তো আর সংসার করা হবে না।
নিজের কথা বাদ দিয়ে হিরা বলল,
চেনা নেই জানা নেই এক ছেলে এসে তোমার মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে গেলো!
আর তাতে তুমি আনন্দিত হচ্ছ।এটা কি পুরোটাই নাটক মা।
নাকি তোমাদের সাজানো ছিলো সব।
হুর আর কিছু বলার আগে সালমা বেগম বললেন,
তোর কি মনে হচ্ছে কি মনে হচ্ছে না তা দিয়ে আমার কিছু যায় আসে না।
কারন যে নিজের স্বার্থে নিজের বোনের ক্ষতি যায়।
সে কোন কিছু শোনা বা জানার যোগ্য না।
তুই তোর কাজ কর সকালে আবার আমাকে কাজে যেতে হবে।

রুহুল মিয়া রুমে ঢুকেই নিজের স্ত্রীকে মা/র/তে শুরু করলেন।
সালমা বেগম চুপ করে সহ্য করছেন।
হারুন ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে এককোনায় দাঁড়িয়ে নিজের মাকে দেখে কাঁদছে।
হিরা আর সহ্য করতে পারলো না সামনের রুম থেকে ব/টি এনে নিজের বাবার সামনে ধরে বলে,
মায়ের শরীরে আর একটা আঘাত করলে তোমার হাত আমি আর রাখবো না।
রুহুল মিয়া এবার রাগ হয়ে বলে তোর এতো সাহস।

হিরাও নিজের বাবার দিকে তেড়ে এসে বলে,সাহসের কি দেখেছ তুমি!
সালমা বেগম মাঝখানে দাঁড়িয়ে পরলেন।
ক্লান্ত কন্ঠে বললেন, নিজের মেয়ের হাতে ম*র*তে না চাইলে এখান থেকে বিদায় হও।
মানুষ সহ্য করতে করতে যখন তার সহ্য সিমা অতিক্রম করে ফেলে তখন সে আর কোন কিছু পরোয়া করেনা। তোমাকে শেষ করে দিতে ওর হাত কাঁপবে না।
রুহল মিয়া কপট রাগ দেখিয়ে চলে যেতে যেতে বললেন,
বাপের ঘাড়ে বসে খাচ্ছে আবার বাপের গাড়েই ছু/ড়ি চালাতে চায়।
"একেই বলে, দুধ কলা দিয়ে কাল সা/প পোষা।

সালমা বেগম হারুনকে কোলে নিয়ে আদর করতে লাগলো।
হারুন শান্ত হতেই। সালমা বেগম হিরাকে উদ্দেশ্য করে বলল,আমি সত্যি জানিনা ছেলেটা কে?
তবে আমি জানি আমার মেয়েকে। ছেলে যেইহোক না কেন এই বুড়ো খাটাশের চেয়ে ভালো।
আর আমি চাইনা তোর মত ওর জীবনটাও নষ্ট হোক। আর রইলো হামিদের কথা।
যে ছেলে নে/শা করে করে নিজের কিডনি ড্যামেজ করে ফেলেছে।
তাকে বাঁচিয়ে ফলাফল শুন্য। কারন কু/কু / র কে যতই ঘী খাওয়ানো হোক না কেনো,
নোংরা দেখলে সে সেখানে মুখ দেবেই। তুই ও হুরের মত নামাজ পড়া শুরু করে দে।
জানি গার্মেন্টসে কাজ করে পর্দা করা যাবে না। কিন্তু চাইলে নিজেকে সামলে চলা যাবে।
বাকিটা তোর ইচ্ছে। ওইরকম লোভি আর নে/শা খোরের সাথে না থেকে একা থাকা খুব ভালো।
বাকিটা তোর ইচ্ছে। আল্লাহ তায়ালা চাইলে উত্তম কিছু আসবে।

গাড়ীতে হুর আর ফুয়াদ পাশাপাশি। হুরের চোখে এবার অশ্রু তবে তা কৃতজ্ঞতার অশ্রু।
আল্লাহ তায়ালা কাউকে নিরাশ করেন না। শুধু আমদের তার উপর বিশ্বাস আর ভরসা রাখতে হবে।
ফুয়াদ হুরের দিকে তাকিয়ে বলে কেঁদে কেঁদে নিকাব ভেজানোর মত কি হয়েছে?
আপনাদের জীবনে কান্না ছাড়া আর কিছু নেই নাকি?
হুর চুপ করে রইলো। ফুয়াদ আবার বলল,তখনতো খুব চেটাং চেটাং কথা বললেন,
এখন মুখে কুলুব এঁটে বসে আছেন কেন? উত্তর দিন।
হুর বললো,আমি কাঁদছি তবে ওই কান্না না।
- কাঁদছি মানে ওই কান্না নান।এসব উদ্ভট কথার মানে কি?
- না আমি বলতে চাইছি আমি কেঁদেছি তবে সেটা আনন্দের কান্না।দুঃখের কান্না নয়।
- আপনি কি বিয়েতে রাজি ছিলেন না।
- আমি কোনটাই ছিলাম না শুধু আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রেখেছিলাম।
আল্লাহ যা করবেন আমার ভালোর জন্যই করবেন। তাকদীরে যা আছে তা তো হবেই।
আপনার এরকম বোকা বোকা কথার মানে তো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আপনি সঙ সেজে বিয়েতে বসে পরলেন।
যদি আমি তখন না আসতাম। আর এসেও যদি বিয়ে না করতাম!

- আপনার কথাও ঠিক তবে আমার বিশ্বাসের কাছে ভিত্তিহীন। আপনি এসেছেন।
আবার বিয়েও করেছেন। আপনি কি জানতেন এখানে আসলে আপনার বিয়ে হবে?জানতেন না।
কারন ভাগ্যে যা আছে তা হবেই। সেটা ভালো হোক বা খারাপ।
সব আমাদের নিজের কর্মের ফল।তাই ভরসা রাখতে হবে প্রতিপালকের উপর।
- ওহহহ তাই নাকি।
তাহলে এই যে ধরুন আমি আর আপনি গাড়ী করে যাচ্ছি এখন আমি ইচ্ছে করে আপনার কোন ক্ষতি করলাম। তাহলে এটাকে? কি বলবেন।
- আমার কি বলার আছে? আপনিই তো বলে দিলেন। আপনি ইচ্ছে করে করবেন।
মানে হলো আপনি পরিকল্পনা করে তারপর করবেন।
আর মানুষকে আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান দিয়েছে ভালো খারাপ বিবেচনা করার।
আপনি যখন কোন খারাপ কাজ করেন। তখন আপনি জানেন সেটা অন্যায়।
মানে জেনেই অন্যায় করেন।
তারমানে আমার কোন ক্ষতি আপনি স্বইচ্ছেতে করলে আপনার পাপ হতো আর তার দায় ভাড়ও আপনার। কারণ আপনি দুনিয়াতে পাপ পূন্য যেটাই করবেন।
পরকালে সেটার শাস্তি অথবা পুরস্কার পাবেন।

হুরের কথা শুনে ফুয়াদ ভাবতে লাগলো কথাতো ঠিক বলেছে।
কিন্তু একদিনের পরিচয়ে এতো কথা কি ভাবে বলছে?
আচ্ছা আপনার সাথে আমার তো এখনো পরিচয় হলোই না।
-জানিনা কবুল বলার পর থেকে নিজের মধ্যে কেমন একটা শক্তি আসলো।
মনে হতে লাগলো এখন আর আমার নিজের কেউ আছে আমাকে আগলে রাখার।

- তোমার কি কোন ভয় নেই। কার সাথে বিয়ে হলো তার অতীত কির?
- এসব জেনে আমার কি?
তবে বিয়ে যখন হয়েছে তখন আপনার ভুল থাকলে তা শুধরে দেয়ার দ্বায়িত্ব আমার।
- না আমি তোমাকে স্ত্রী হিসেবে মর্যাদা দেবো আর না অধিকার।
হুর ফুয়াদের কথা শুনে শব্দ করে হেসে ফেললো।
ফুয়াদ ভ্রু কুঁচকে বলে,আমি হাসির কি বললাম?

চলবে....

কোন মন্তব্য নেই