Breaking News

আধার রাতের আলো । পর্ব - ০৪

সময় যত এগোচ্ছে হুরের হার্ট বিট ততই ফাস্ট চলছে।তবুও নিজেক শান্ত রাখার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। বিপদের সময় দোয়ায় ইউনুস পড়তে হয়। হুর মনে মনে দোয়ায় ইউনুস পড়ছে।...لَّاۤ اِلٰہَ اِلَّاۤ اَنۡتَ سُبۡحٰنَکَ ٭ۖ اِنِّیۡ کُنۡتُ مِنَ الظّٰلِمِیۡنَ ۚۖ ( লা ইলাহা ইল্লা আন্তা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ্ জালীমিন)

অর্থ -তুমি ছাড়া কোন মা'বুদ নেই।তুমি সকল ত্রুটি থেকে পবিত্র। নিশ্চয় আমি সীমালঙ্ঘনকারী।
ফুয়াদ মাহতাব সাহেবের পাঞ্জাবির কলার ধরে বলে,কোন মেয়ের জীবন নষ্ট করতে এসেছিস এখানে?
মাহতাবে সাহেব ফুয়াদের হাত কলার থেকে ছাড়িয়ে বলে,তুমি এখানে কেন এসেছো?
তোমাকে নিশ্চয় নাহিদ পাঠিয়েছে। আমার যা ইচ্ছে করবো।
তাতে তোমাদের কী? আর আমি তো পৃথিবীতে এমন বয়স্ক লোক নই যে বিয়ে করছি।
আমার মতো অনেকেই করে। যাও নিজের চরকায় তেল দাও।
ফুয়াত চিৎকার করে বলে,আমি জানতে চাই মেয়ের বয়স কত?
যদি চব্বিশের উপরে হয় তাহলে আমি বাঁধা দেবো না।
আর নয়তো এই বিয়ে হতে দেবো না। পুলিশ এনে আপনাকে গ্রেফতার করাবো।
- তোমাকে আমি এতো সব কেন জানাবো? তোমাকে এসব জানাতে বাধ্য নই।
আমি তো বিয়ে করবোই দেখি কে? ঠেকায়?

- ফুয়াদ কাজী সাহেব আর হুজুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,
এরকম একজন মানুষের বিয়ে পড়াতে চলে এসেছেন যার নিজের ছেলেকে বিয়ে করারনোর
বয়স হয়েছে! যার মেয়ের ঘরে নাতি/নাতনি আছে।
আপনাদের মনুষ্যত্ব বলে কিছু আছে!
যদি না বলেন মেয়ের বয়স কত তাহলে বিয়ে পড়াতে তো দেবোই না উল্টো এই সব লোকদের দিয়ে আপনাদের গণধোলাই করাবো। এবার আপনারা যেটা ভালো মনে করেন।
রুহল মিয়া রাগ দেখিয়ে বলে, তুমি কোথাকার মাতব্বর শুনি!আমার মেয়ে আমি বিয়ে দেবো।
তাতে তোমার কি?
- আপনারা যদি ভেবে থাকেন এভাবে আমি বিয়ে হতে দেবো তাহলে ভুল ভাবছেন।
সব কথা না জেনে কিছুতেই এই বিয়ে হবে না।
কথা শেষ করে পায়ের উপর পা তুলে একটা প্লাস্টিকের চেয়ারে বসলো।
মাহতাব সাহেব উঠে এসে বলল, নিজের বোনের ভালো চাও তো এখান থেকে সরে যাও।
- আমার বোন কে নিয়ে আপনার চিন্তা করতে হবে না।
আমার বোনের চিন্তা করার জন্য আমি আছি। এখন নিজের চিন্তা করুন।
হিরা দৌঁড়ে এসে হুরকে বলল,
কিরে তোর কোন নাগরকে খবর দিয়ে এসে আমাদের সামনে সাধু সেজে বসে আছিস?
- হুর তখন গভীর ভাবে আল্লাহ তায়ালাকে স্বরণ করতে ব্যস্ত। হিরার কথা কানে যেতেই। হুর বলে, কি বলছো বুবু! তুমি তো জানোই আজ পর্যন্ত কোন ছেলের সাথে আমার ভাব তো দূরের কথা। কথা অব্দি হয়নি।
- এখনও মিথ্যে বলবি হুর! সে এসে তোর বিয়েতে বাঁধা দিচ্ছে আর তুই বলছিস কারো সাথে কথাও হয়নি। আমরা কি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি?
- দেখো বুবু কে এসেছে? কেন এসেছে? আমি জানিনা। আমি শুধু জানি বিয়ের আগে কোন হারাম সম্পর্কে আমি জড়াবো না আর জড়ায়নি।
- তুই তো ভালো ছুপা রুস্তম বের হলি। কাউকে কেউ না জেনে না চিনে এমনি তাকে সাহায্য করতে চলে আসে! এখনো সময় আছে ভালোয় ভালোয় বল ছেলেটা কে? কতদিন ধরে ওর সাথে তোর সম্পর্ক চলছে।
- দেখো বুবু তোমার এরকম উদ্ভট প্রশ্নের কোন উত্তর আমার কাছে নেই। আমি জানি আর আমার প্রতিপালক জানেন আমার কারো সাথে কোন রকম হারাম সম্পর্ক নেই।
হুরের মা সালমা বেগম এসে বড় মেয়েকে ধমক দিয়ে বললেন, থামবি তুই!
আমার মেয়ে কেমন আমি জানি। ছোট বেলায় যখন ওরে আমি মাদরাসা ভর্তি করেছি।
তারপর থেকে এই সতেরো বছর ধরে দেখছি।
বুঝ হওয়ার পর আমার মেয়ে নামাজ ছাড়েনি।
পর্দা করেছে।ও যখন বলছে এই ছেলেকে ও চেনেনা তাইলে এটাই সত্য।
আল্লাহ তায়ালা হয়ত আমার মাইয়াডারে এই জুলুমের হাত থাইকা বাঁচাইতে হেরে পাডাইছে।
নিজের মত সবাইরে মনে করিসনা হিরা।
তুই যদি হুরের মত চলতি তাইলে তোর কপালে জামালের মতো নে/শা খোড় জামাই জুটতো না।
ছোট বইনে মাদরাসা পড়ছে আর তুই প্রাইমারি পর্যন্ত পার করিসনি।
কি করলি পড়া লেহা ছাইড়া দিলি। বারো তেরো বছরেরই মেইলে ডুকলি কাম করতে।
আর শুরু করলি প্রেম পিরিতি। এহন নিজের ভুলের খেসারত তো তোরেই দিতে অইবো।
হেই খেসারত আরেকজনে কেন দিবো। আল্লাহ আছেন হিরা। তারে ভয় কর।
হিরা চুপ হয়ে গেলো। কারণ তার মায়ের বলা প্রতিটি কথা সত্য।
ফুয়াদ ত্যাড়ামি করে বসেই আছে। মাহতাব সাহেব বললেন,
এর পরিণামে তোমার বন্ধুকে ত্যাজ্য পুত্র করবো।মনে রেখো তুমি।
আর কতক্ষন পাহারা দিবা তুমি। আজ না হোক কাল এই মেয়েরে তো আমিই বিয়া করমু।
ফুয়াদের হাতে হুরের ব্যাগ দেখে রুহুল মিয়া চেয়ে রইলো।
মনে মনে ভাবলো এই ব্যাগটা তো হাঁটবার দিন শাহীবাজার থেকে আমি আনছি একশো টাকা দিয়ে হুরের জন্য।
রুহুল মিয়া কইলো,তোমার হাতে আমার মাইয়ার ব্যাগ কেন? তোমরা কি ভালোবাসা টাসা করো নাকি?
রুহুল মিয়ার কথা শুনে ফুয়াদ আশ্চর্য হলো! কারণ হুরের প্রশংসা হর হামেশাই তার মায়ের মুখ থেকে শুনেছে। আর সেই মেয়ে কিনা টাকার কাছে বিক্রি হচ্ছে! আর হুরের বয়স যতটুকু জানে সতেরো।
ফুয়াদ রুহুল সাহেবকে বলল,না থাকলে কি আর বিয়া ভাঙ্গতে আসছি। আর আপনি কেমন বাবা জেনে বুঝে নিজের সতেরো বছরের মেয়েকে পঞ্চান্ন বছরের এক বুড়ো খাটাশের সাথে বিয়ে দিতে চান!
মাহতাব সাহেব রুহুল মিয়ার উপর রাগ দেখিয়ে বলে,রুহুল মিয়া এসব কি?
আমকে মেয়ে দেয়ার কথা বলে, মেয়ের আশিককে এনে বসিয়ে রেখেছেন!
আমি বিয়ে করবো মানে করবোই। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।
ফুয়াদ বলল, জ্বী কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন।
ফরহাদ রেজার এক মাত্র ছেলে ফুয়াদ রেজা পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহর ধার্য করিয়া।
রুলহ মিয়ার কনিষ্ঠ কন্য হুরাইন সুলতানাকে বিবাহ করিলো।
কাজির হাত থেকে খাতা নিয়ে নিজেই তা লিখে দিলো।
হুজুরের হাত ধরে সোজা নিয়ে এলো পাশের রুমে।
রুমে টুকেই দরজা লক করে দিয়ে হুজুরকে বললো,বিয়ে পড়ান হুজুর।
ফুয়াদ হুট করে এমন কিছু করবে,সেটা বুঝে উঠার আগেই ফুয়াদ দরজা লক করে দিয়েছে।
রুহল মিয়া আর মাহতাব সাহেব একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে দ্রুত দরজার কাছে এসে দরজা খুলার জন্য চেঁচামেচি করতে লাগলেন।
হুর হঠাৎ নিজের রুমে কোন পুরুষ দেখে নিজেকে তার মায়ের পিছনে আড়াল করে নিলো।
ফুয়াদ সেদিকে কোন খেয়াল না দিয়ে নিজের মেবাইল বের করে আলো বেগমকে কল করে, রিসিভ হতেই ফুয়াদ বলে,হুরকে বিয়ে করলে তুমি আর নূর খুশি তো?
আলো বেগম বললেন,মানে!
- এখন মানে বলার সময় নেই হ্যাঁ নাকি না?
- অবশ্যই খুশী হবো। আলো বেগমের উত্তর শুনে ফুয়াদ সাথে সাথে কল কেটে দিলো।
হুজুরের দিকে তাকিয়ে বলে,বিয়ের কি দোয়া টোয়া আছে তাড়াতাড়ি শুরু করুন।
হুজুর বিয়া পড়ানো শুর করলেন। ফুয়াদকে কবুল বলতে বলার সাথে সাথে ফুয়াদ কবুল বলে দিল।
হুরাইনকে বলতে বললে হুর কিছুক্ষণ চুপ রইলো।
তারপর বলে দিলো। বিয়ে পড়ানো শেষ হতেই ফুয়াদ।ভিডিও অফ করে।
হুজুরকে বলে,আচ্ছা এই বিয়ে শরিয়ত মোতাবেক সম্পন্ন হয়েছে তো? হ্যাঁ হয়েছে।
কারণ আমার বিয়ের খুতবা সামনের রুম পর্যন্ত পৌঁছেছে।
তারমানে তারাও সাক্ষী হয়ে গেছে এই বিবাহের। আজ থেকে আপনারা হালাল ভাবে স্বামী স্ত্রী।
কথাটা শুনেই হুরের বুক কেমন কেঁপে উঠলো,তার সাথে কি হচ্ছে!
এই লোকই বা কে? কোথা থেকে এসে তাকে বিয়ে করে নিলো। সত্যি এ নুরের বাবা তো?
হুর আর কিছু ভাবার আগেই ফুয়াদ বললো,আপনার মেয়েকে বলুন আমার সাথে চলে আসতে।
সালমা বেগম বললেন বাবা হুর পর্দা করে ও বোরখা পরে বের হচ্ছে তুমি অপেক্ষা কর।
ফুয়াদ হুজুরকে উদ্দেশ্য করে বলল,ইসলামি স্বামী স্ত্রী একে অপরের সাথে কোন পর্দা নেই তাইতো?
হুজুর বললেন, আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে একে অপরের পোশাক স্বরূপ। বলে কুরআনে উল্লেখ করেছেন।

(هن لباس لكم وانتم لباس لهن)

তাহলে আপনি বের হয়ে যান বলেই হুজরের হাতে কিছু টাকা দিয়ে দরজা খুলে দিলো।
এতোক্ষণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রুহল মিয়া আর মাহতাব সাহেব দরজায় জোড়ে জোড়ে আ*ঘা*ত করছিলেন। দরজা খুলে যেতেই।তারা সরে দাঁড়ালেন।
রুহল মিয়া কিছু বলার আগেই মাহতাব সাহেব বলেন এই বিয়ে আমরা মানিনা।
জোড় করে বিয়ে করলে বিয়ে হয় না।
ফুয়াদ দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে বলে,
হুজুর এবার আপনার মুখ থেকে শুনতে চাই আমাদের বিয়ে বৈধ নাকি অবৈধ?

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই