Breaking News

আধার রাতের আলো । পর্ব - ১৭

আলো বেগম হুরের হাত দুটো' ধরে বলে, মা তুই আমাকে কথা দে,কখন আমার ছেলেটাকে একা ছাড়বি না।এই সময়টাতে ছেলেটার পাশে থাকবি?

হুর আলো বেগমের হাত ধরে বলে,"মা" যে সম্পর্ক আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে দিয়েছেন। সেটা আমি কখন আমার দেহে প্রাণ থাকতে শেষ করবো না। আর হতেও দেবো না। ছেড়ে যাওয়ার তো প্রশ্ন-ই আসে না!
- মায়ের মন তো বুঝতেই পারছিস।আমার বোনের মেয়েরা ভালো না। ওরা ঝামেলা করবে।
- আপনি নিশ্চিত থাকুন।

আদিয়ার ফোনটা সেই কখন থেকে বেজেই যাচ্ছে।
আদিয়া জানে কল যে করেছে সেই মানুষটা নাহিদ ছাড়া কেউ না।
কিন্তু কোন মুখে নাহিদের সাথে কথা বলবে সে! চোখ থেকে টুপ টুপ করে অশ্রু কণা গড়িয়ে পড়ছে।
খোলা বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসে এক মনে আকাশের পানে তাকিয়ে আছে।
নাহিদ ও নাছোড়বান্দা কল করেই যাচ্ছে করেই যাচ্ছে।
এক সময় বিরক্ত হয়ে আদিয়া কল রিসিভ করে কড়া কন্ঠে কিছু বলবে
তার আগেই নাহিদের কান্না মাখা কন্ঠ ভেসে আসে আদিয়ার কানে।
নাহিদ কোনমতে বলছর আদিয়া আমাকে ক্ষমা করে দিও।
আদিয়া কিছু বলবে তার আগেই কল কেটে যায়।
আদিয়ার ঘুম ভেঙে গেলো। উঠো বসলো।

আরো পড়ুনঃ

আশেপাশে তাকিয়ে দেখে এটা তার রুমের বেড।
তারমানে স্বপ্ন ছিলো!চোখের কোণ ভিজে উঠলো আদিয়ার।
কত রাত পার করেছে নাহিদের সাথে কথা বলে,
সুযোগ থাকা সত্ত্বেও নাহিদ কখনো সেটা কাজে লাগায়নি।
বরং বারবার বলতো বিয়ের পর তোমাকে মন মতো স্পর্শ করবো।
এখন সব স্পর্শ জমা থাক।বেহায়া মন তো চাইবেই তোমাকে ছুঁয়ে দিতে।
কিন্তু আমি চাইবো তোমাকে পবিত্র ভাবে ছুঁয়ে দিতে।
যে স্পর্শে পাপ নেই, যে স্পর্শে বাজে উদ্দেশ্য নেই,
শুধু আছে এক প্রেমিক পুরুষের তেত্রিশ বছরের পবিত্র ভালোবাসা।

হাতের উল্টো পিটে চোখের জল মুছে নিচ্ছে বারং বার।
নিজের অবাধ চলাফেরা তার কাছ থেকে সব কেঁড়ে নিলো।
বেড ছেড়ে উঠে উদাস দৃষ্টিতে আকাশের পানে তাকিয়ে বলে,
আমিও ঠিক তোমার মত নিঃসঙ্গ চাঁদ।তবে তুমি পূর্নতা পাও ভালোবাসায়।
আর আমার কপালে সেই সৌভাগ্য নেই।কেন আগে আমার জীবনে হুর এলে না।
কেন কেউ আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দিলো না আমি ভুল পথে চলছি।
এখন যে আমার বেঁচে থাকা দুষ্কর, আত্মহত্যা মহা পাপ।
আমি কি করে এই মুখ নিয়ে দাঁড়াবো নাহিদের সামনে! মানুষ যখন একা হয়ে যায়,
তকন সঙ্গী হিসেবে,চাঁদ আর বিশাল আকাশকে খুঁজে নেয়।
বিনা সংকোচে নিজের ভিতরে জমানো কথাগুলো তাদের কাছে জমা রেখে নিজেকে সান্ত্বনা দেয়।

নাহিদের চোখে ঘুম নেই দেশ ছেড়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থায় কম্পিলিট,
এখন শুধু টিকেট হাতে পাওয়া বাকী।
হোয়াটসঅ্যাপে নিজের প্রিয়তামাকে মেসেজ লিখছে আর কাটছে।সেন্ট করা হচ্ছে না।
ভালোবাসা একটা সময় এসে অসহায় হয়ে পরে। না সামনের মানুষটাকে বোঝানো যায়,
তাকে ছাড়া আমার ভিষণ কষ্ট হচ্ছে। আর না নিজেকে সামলে নেয়া যায়।
এই যে এই মূহুর্তে নাহিদের ইচ্ছে করছে, আদিয়াকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরতে।
কিন্তু চাইলেই কি সব সম্ভব।
মাহতাব সাহেবের লাশ আজ দু'দিন ধরে মেডিকেলের মর্গে বে ওয়ারিশ লাশের পাশে পড়ে আছে।
কেউ তার খোঁজ করেনি। আজ কোথায় তার অংহকার?কোথায় তার দাম্ভিকতা।সব শেষ।

হুর রুমে আসলো, কিন্তু রুমে তো ফুয়াদ নেই। হুর এদিকে ওদিকে তাকিয়ে খুঁজতে লাগলো,
কিছুক্ষণ খোঁজার পর মৃদু কন্ঠে ডাকলো, ডাক্তার আপনি কোথায়?
কিছু সময় থেমে আবার ডাকলেন, নুরের বাবাই আপনি কোথায়?
কোন সাড়া না পেয়ে হতাশ হলো। ঠিক তখনি কেউ হুরের চোখের উপর হাত রাখলো।
হুর শিহরিত হলো।
ফুয়াদ এক হাত হুরের চোখের উপর রেখে আরেক হাত হুরের কোমড়ে রেখে হুরকে নিজের বক্ষের সাথে।মিশিয়ে নিলো। হুরের কম্পিত কন্ঠে বললো,
"আপনি" আর কিছু বলার আগেই ফুয়াদ হুরকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে হুরের ঠোঁটে আঙুল রেখে বলে,
হুশ একদম কোন কথা নয় আজকে শুধু অনুভব করবে আমার ভালোবাসাকে।
তোমাকে আজ আদরের চাদরে মুড়িয়ে নেবো।
আগামীকালের নতুন সূর্যের সাথে পরিচিত হবে এক নব হুরের।
যার শরীরে প্রতিটি কোনায় কোনায় লেগে থাকবে ফুয়াদের ভালোবাসা।
যার হৃদয়ে স্থায়ী হবে ফুয়াদ নামক এক যুবকের বসবাস।

হুরের কথা জড়িয়ে যাচ্ছে, চেয়েও কিছু বলতে পারছে না।
হৃদ যন্ত্র কেমন বেসামাল হয়ে পড়ছে!
এ কেমন অনূভুতি? এ অনূভুতির সাথে তো হুর পরিচিত নয়।
অর্ধ আলো অর্ধ অন্ধকারে ফুয়াদ চেয়ে আছে তার হুর পরির দিকে,
এ যেনো তাকিয়ে থেকে তৃষ্ণা মিটিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা।
তবে এ কেম কথা তৃষ্ণা তো বেড়েই চলেছে।
হুরকে শক্ত করে এবার জড়িয়ে নিলো নিজের সাথে।
দুজনেই মনে মনে দোয়া পরে নিলো।

রাতের নিরবতা ভেদ করে দু'জন মানুষ নিজেদের হৃদ যন্ত্রের বেসামাল পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে ব্যস্ত।কিছু সময় জড়িয়ে রেখে।হুরকে কোলে তুলে নিলো ফুয়াদ।
নিজের কোলের মধ্যে রেখেই হুর কে নিয়ে বেডে বসলো।
হুরের চোখ খুলছে তো লজ্জায় আবার বন্ধ করে নিচ্ছে।ফুয়াদ এই প্রথম হুরের অধরে অধর মিলিয়ে দিলো।
হুর যেনো জমে গেলো। খামচে ধরলো ফুয়াদের পাঞ্জাবি।
মিনিট দু'য়েক পর হুরের ঠোট ছেড়ে হুরের গালে চুমু খেলো।
তারপর আদুরে কন্ঠে বলল, আজ আমি আমার প্রিয়তমা সঙ্গীনির জন্য গাইবো,,,

অনুভবের গভীরে,
শুন্য আমার কুটিরে
মুছে দিলে যতনা,,,,,তুমি কি তা জানো না!
সঙ্গীনি প্রিয়তমা তুমি শুধু তোমার উপমা।
তুমি তা জানো না।
সঙ্গীনি প্রিয়তমা তুমি শুধু তোমার উপমা।
বঁধু বেশে সেজে এসে,
নিয়ে নিলে ভালোবাসা,,,,
সেই থেকে মন সঙ্গী তুমি,স্বপ্ন আশা কান্না হাসা।
মুখরিত আলো ছাঁয়ায়,অনুরতি মোহ মায়ায়,,
তোমার ঘিরে জেগে থাকা।
সুখ নিরন্তর ভালোবাসা।
এখন আমার দৃষ্টি নত।
ভাবনা গভীর শত-শত।
তুমি আমার অন্য আলো।
আঁধার ঘরে প্রদীপ জ্বালো,,,,,
তুমি কি তা জানোনা!
সঙ্গীনি প্রিয়তমা, তুমি শুধু তোমার উপমা....
তুমি কি তা জানো না।

এভাবেই ভালোবাসাময় কেটে গেলে একটি রাত। সুবহে সাদিক সবে শুরু হচ্ছে।
মুয়াজ্জিনের মধুর কন্ঠে আজান ভেসে আসছে হুরের কানে।
নিজের প্রিয়তম স্বামীর বুকে শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে হুর।
পিট পিট করে চোখ খুলে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো ফুয়াদের বক্ষ থেকে।
পড়নের এলোমেলো ড্রেসটা ঠিক করে কাভার্ড থেকে ফুয়াদের আনা
একটা লাল রঙের জামদানী শাড়ি বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।
সাওয়ার নিয়ে বের হয়ে নিজের ভেজা চুলের ফোটা ফোটা পানি ফুয়াদের চোখ মুখে ছেটাতে লাগলো। ফুয়াদের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,উঠে পরো প্রিয়।
তোমার সাথে আমি শুধু দুনিয়াতে নয় আখেরাতেও থাকতে চাই।
ফুয়াদ উঠে বসলো, হুরের দিকে তাকালো লাল টুকটুকে শাড়ীতে হুরকে যেনে লাল পরি লাগছে।ফুয়াদ বললো,হুর পরি তোমার ওই লাল রাঙা শাড়ী আমার হৃদয়ে ঝড় তুলে দিচ্ছে।

হুর জায়নামাজ পেতে তাতে দাঁড়িয়ে একবার ফুয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে,ফ্রেশ হয়ে আসুন আপনার লাল পরি সব সময়ের জন্যই আপনার। এবার তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হোন নামাজ পড়তে হবে।
হুর নামাজে দাঁড়িয়ে গেলো,
ফুয়াদ ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে হুরের পাশেই নামাজে দাঁড়ালো,
হুর ফুয়াদের জন্য জায়নামাজ পেতে রেখেছিলো।
ফুয়াদ সালাম ফেরাতেই হুর বলে,
আপনার ডান আর আমার ডান এক করে আমরা আজ মোনাজাত করবো।
মোনাজাত শেষ হতেই হুর সূরা ইয়াসিন তেলাওয়াত করলো,ফুয়াদ মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করলো।
হুরের তেলাওয়াত শেষ হতেই ফুয়াদ হুরের কপালে চুমু দিলো।
হুরের হাত নিজের হাতে আবদ্ধ করে বলে,তোমাকে পেয়ে আমি ধন্য।
তুমি আমার আধার_রাতের_আলো।
হুর ফুয়াদের কপালে চুমু দিয়ে বলে,তোমাকে পেয়ে আমি পূর্ণ।
তুমি আমার আধার রাতের আলো
ফুয়াদ এক হাতে হুরকে জড়িয়ে ধরে বলে,
সত্যি তোমার মত কেউ আমার জীবনে এসে
আমার শেষ হয়ে যাওয়া জীবনটাকে আবার নতুন করে রঙিন করে তুলবে,বুঝতেই পারিনি।
আমার হুর পরি, আমার বিবিজান সব সময় আমার হৃদয়ের রানী হয়ে থাকবে।

চলবে....

কোন মন্তব্য নেই