Breaking News

শাশুড়ি vs বউ । পর্ব - ০১



শুভ আজ না গেলে হয় না?(মারিয়া)

-না রে পাগলি আজ আমাকে যেতেই হবে,নাহলে ম্যানেজার খুব বকাঝকা করবে।
-আবার কবে আসবা?
-সামনের ঈদেরছুটিতে ইনশাল্লাহ আসবো
-মারিয়া তখন বিষণ্ণ মনে বলে,এতদিন?
-হ্যা
-তোমাকে ছাড়া আমার থাকতে খুব কষ্ট হয় বলে মারিয়া শুভকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়
-আমার হয় না? আমার ও তো ইচ্ছে হয় তোমাকে নিয়ে সময় কাটাই, তোমাকে প্রতি মূহুর্তে বুকে আগলে রাখি,কিন্তু ছুটি তো কম তাই হয়তো তোমাকে সময় কম দেই
-হু

-মন খারাপ করে না আমার লক্ষীটা,ঈদেরছুটিতে এসে সব সুদেআসলে পুষিয়ে দিবো
-মারিয়া তখন জড়িয়ে ধরা থেকেই মাথা উঠিয়ে উঁচু হয়ে শুভর চোখে চোখ রেখে,সত্যি তো?
-আমি কি কখনো তোমার সাথে মিথ্যা বলছি?
-উহু
-শুভ তখন মারিয়ার কপালে ভালোবাসার স্পর্শ দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
এভাবে কতক্ষণ জড়িয়ে রাখার পরে
- মারিয়া
-হু
-সাবধানে থাকবা কেমন
-আচ্ছা
-ভাবিদের সাথে থাকবা,সবার সাথে নিজকে মানিয়ে চলবা
-হুম
-যাও এখন আম্মুরে ডাক দেও তো
-আচ্ছা তুমি কাপড় টা পড়ো আমি আম্মুকে ডেকে আনতেছি।
-ওকে

-আম্মু শুভ আপনারে ডাকে?
-যাও আমি আসছি
-হুম
-সবকিছু ঠিকঠাক হয়ছে তো বাপ?
-হ্যা আম্মু সবকিছু নিছি
-এখনই বেড় হবি?
-হ্যা
-আচ্ছা সাবধানে যাস
-আচ্ছা তুমি ও সাবধানে থাইকো আর মারিয়ারে তোমার সাথে সাথে রাইখো
-আচ্ছা তুই বাড়ির এসব নিয়ে চিন্তা করিস না।
-শুভ তখন মারিয়ার দিকে তাকিয়ে,আমি যাচ্ছি,সাবধানে থাইকো কেমন?
-মারিয়া তখন গলাটা কাৎ করে হ্যা বোধক সম্মতি জানায়।
শুভ তখন হাটতে হাটতে বাড়ির গেটের বাইরে চলে যায় আর মারিয়া বিষণ্ণ মনে শুভর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে।

শুভ আর মারিয়ার বিয়ে ১ মাস হলো হয়ছে।
মারিয়া গড়িব ঘরের মেয়ে,শুভ যেখানে চাকরি করে সেখানকার দারোয়ানের মেয়ে।
*** ১মাস আগের কথা****
শুভ ইন্ডিয়া থেকে ফিরে অফিসে যাওয়া আসার পথে খেয়াল করে দেখে শুভকে বাবা বলে ডাক দেওয়া লোকটি এখন আর গেটের সামনে বসে থাকেনা।
তাহলে লোকটার কি চাকরি চলে গেল? নাকি বাড়িতে কোন সমস্যা হয়ছে?
শুভর মাথায় এই প্রশ্নগুলো বারবার মাথায় এসে ঠেকছে।
শুভ তখন তার কলিগ রানাকে বলে,রানা আমাদের গেটের দারোয়ান টা আসে না কেন?
-স্যার আপনি যখন ইন্ডিয়াতে গেছিলেন তখন তিনি স্ট্রোক করে মারা গেছেন
-কি বলো?
-হ্যা স্যার ওনি অনেক ভালো মানুষ ছিলো
-হ্যা
-হুমম
-আচ্ছা তুমি এই ফাইলটা তারাতারি রেডি করো
-ওকে স্যার
রহিম দারোয়ান শুভকে অনেক পছন্দ করতো, শুভ যখন অফিস শেষ করে বাসায় যাবে তখন দারোয়ান সামনে এসে
-বাবা শুভ একটা কথা বলতাম
-হ্যা কাকা বলেন

-আজকে আমার বাসায় একটু যাবা?
-হঠাৎ বাসায় যেতে বলছেন? কোনকিছু হয়ছে নাকি?
-না বাবা তেমন কিছু না, অনেকদিন পর ভালোমন্দ কিছু কেনাকাটা করলাম,তা তুমি যদি বাসায় গিয়ে দু-মুঠ ডাল ভাত খেতে
-কাকা আমার একটু কাজ আছে
-বাবা কাজ তো সবসময় থাকে,আজকে আমার সাথে একটু চলো।
-শুভ তখন ওনার কথার অবাধ্য হতে পারেনা।
রহিম দারোয়ান শুভকে সাথে করে নিয়ে ওনাদের বাসায় যায়।
-মারিয়া দরজাটা খোল মা, দেখ কে আইসে? অফিসের বড় সাব আইসে
-দাড়াও বাবা খোলছি
-মারিয়া যখন দরজা খুলে শুভর দিকে আড়চোখে তাকায় শুভ ও তখন মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে,শুভ তখন ই মনে মনে ভাবে আল্লাহ এত সুন্দর মানুষ ও বানায়? এই মেয়েরে না দেখলে হয়তো বোঝা মুশকিল।।
কতক্ষন পরে

মারিয়া নিজ হাতে সবকিছু ঠিকঠাক করে খাটের মধ্যে শুভকে খাবার দেয়।
-তোমার বাবার প্লেট কোথায়?
-স্যার বাবা পরে খাবে,আপনি এখন খান
-আরে কি বলছো এসব? কাকা বসেন তো
-না বাবা তুমি বসো আমি একটু পরে খাবো
-কাকা আমি অফিসের মধ্যে স্যার হলেও এখানে কি স্যার নাকি? এখানে আমি আপনার ছেলের মতো
-তারপরেও
-এই তোমার বাবারে খাবারের প্লেট দেও
-আচ্ছা।
সেদিনের মতো খাবার খেয়ে ওনার সাথে আরো কিছু কথা বলে বিদায় নেয়।
শুভ চেয়ারে বসে এসব চিন্তা করছে আর ভাবছে এই মেয়েটার কি হবে?
ওনাদের তো এই শহরে কেউ ছিলো না,তাহলে কোথায় যাবে? কি করবে? শুভ কেন হিসাবই মিলাতে পারছে না

শুভ তখন মনে মনে ভাবে আজই সে ওদের বাসার ঠিকানায় যাবে।
শুভ বিকেলে অফিস শেষ করে আগের ঠিকানায় বাসায় যায়।
বাসায় গিয়ে দরজায় টোকা দেওয়ার পরে মারিয়া এসে দরজা খুলে।
ওর চোখমুখ দেখে মনে হচ্ছে কয়েকদিন না খেয়ে আছে।
মারিয়া শুভর দিকে তাকিয়ে কান্না করে দেয়।
আরে আরে কান্না করছো কেন?
-আমার এই পৃথিবীতে আর কেউ নেই?
-কে বলছে কেউ নাই?
আমি আছি তো
-মারিয়া তখন ও কান্না করতে থাকে।
শুভ তখন মারিয়াকে বলে
-তোমাদের পরিচিত কেউ নেই?
-নাহ

-তোমাদের গ্রামের বাড়ি তো রংপুর তাই না?
-হ্যা
-তাহলে কি সেখানেও পরিচিত কেউ নেই?
-পরিচিত তো আছেই কিন্তু ঠাই দেওয়ার মতো কেউ নেই
-এই কয়দিন কিভাবে চলাফেরা করছো?
-আপনাদের অফিস থেকে আব্বার বেতন টা দিছিলো সেটা দিয়ে
-ওহহ
-হ্যা সেখান থেকে আর ২হাজার আছে
-রুম ভাড়া সেটা থেকে দিয়ে দিতে হবে, এসব বলতেছে আর চোখেরজল টপটপ করে পড়তেছে
-আচ্ছা ওসব নিয়ে চিন্তা করো না।
-তো কি করবো? সামনের মাসের ভাড়া তো দিতে পারবোনা,আর তখন বাড়ির মালিক বেড় করে দিবে।
তখন রাস্তায় রাস্তায় হাটা ছাড়া আর কি করবো?
- এতদূরের চিন্তা ভাবনা করা লাগবে না।

-তো কি করবো?
- চলো আমার সাথে
-কোথায়?
-কাজী অফিসে
-কেন?
-কাজী অফিসে মানুষ কি ব্যাপারে যায়?
-বিয়ের ব্যাপারে
-হুম চলো বিয়ে করবো
-কাকে
-সেটা পরেই বুঝতে পারবে,এখন চলো তো
-মারিয়া তখন ও কি করবে না করবে সেটা ভাবছে
-আরে এত ভাবাভাবির কি আছে? আমাকে বিশ্বাস করো না?
-হু
-তাহলে চলো বলে শুভ রুম থেকে বেড় হয়ে দাড়ায়, মারিয়া তখন বাহির থেকে দরজা লক করে মাথায় ঘোমটা দিয়ে শুভর পিছুপিছু হাটতে থাকে।
-শুভ মারিয়াকে রিক্সায় করে নিয়ে কাজী অফিসের সামনে গিয়ে নামে।
মারিয়া তখন ও কৌতহলের মধ্যে আছে যে এসব কি হচ্ছে এসবের জন্য মারিয়া কখনোই প্রস্তুত ছিলো না।
-ওনি পাত্রী?

-হ্যা
-কাজী সবকিছু বলে যখন কবুল বলতে বলছে মারিয়া তখন শুভর দিকে তাকিয়ে চোখেরজল ফেলতে থাকে।
-শুভ তখন হাত দিয়ে চোখেরজল মুছে দেয়।
-মারিয়া তখন ৩বার কবুল বলে দেয়।
শুভ তখন কাজী সাহেবকে টাকা দিয়ে মারিয়ার হাত ধরে গাড়িতে উঠায়।
গাড়িতে উঠে মারিয়া শুভর হাত টা শক্ত করে ধরে রাখে।
শুভ মারিয়াকে নিয়ে শুভর রুমে যায়।
-এখনো কি পুরোপুরি বিশ্বাস করতে পারোনি?
-বিশ্বাস না করলে কি এতদূর এসেছি
-হুম কিন্তু নিজকে বিশ্বাস করতে পারছিনা
-কেন? কি হয়ছে?
-নাহ কেমন করে সবকিছু হুটহাট হয়ে গেলো,আচ্ছা একটা কথা বলি?
-হ্যা বলো
-আপনি কি মন থেকে পছন্দ করে বিয়ে করছেন? নাকি অনুসূচনা থেকে?
-মন থেকেই করছি পাগলি টা,এখন ফ্রেশ হয়ে নাও

-হু
এভাবেই শুভ মারিয়াকে বিয়ে করে কিন্তু শুভ তখনও তার পরিবারে এসব জানায়নি।
শুভ যখন মারিয়াকে নিয়ে তাদের বাসায় যায় তখন তার পরিবার এসব দেখে অবাক হয়ে যায়। প্রথমে কেউ মানতে না চাইলেও ৪-৫ দিন পরে সব মেনে নেয়। শুভ ১মাসের মতো থেকে যখন ঢাকা যায় তখন ই মারিয়া শুয়ে শুয়ে এসব ভাবতে থাকে।
-মারিয়াআআআ(শুভর মা)
-হ্যা মা আসছি
-যাও পুকুর থেকে ২কলসি পানি নিয়ে আসো
-মা আমি তো কলসি নিতে পারিনা
-দারোয়ানের মেয়ে হয়েও এমন কথা? আর কোটিপতির মেয়ে হলে কি করতা?....

চলবে...

কোন মন্তব্য নেই